রবিবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:১৩ অপরাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা:
নির্মানাধীন ডিপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু কলেজের জন্য অর্ধ কোটি টাকার জমি দান করে পৌরসভার সোয়া ১১ কোটি টাকার রাস্তা বাগিয়ে নিলেন প্রভাবশালী মো: মঞ্জু। এ ঘটনায় প্রায় ২০জন কৃষক পথে বসার উপক্রম হয়েছে। অধিগ্রহন না করেই পাবনা সাঁথিয়া পৌরসভা ব্যাক্তিমালিকানাধীন জমিতে জোর পুর্বক রাস্তা নির্মান করছে। স্থানীয় কৃষকদের দাবি কোন প্রকার নোটিশ বা ক্ষতিপুরন না দিয়েই পুলিশ প্রহরায় প্রায় ২০ ফিট চওড়া ২কিলোমিটার রাস্তা তৈরীর কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে করে জমিতে থাকা ফসল নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে স্বল্প জমির মালিকেরা জমি হারিয়ে ভুমিহীন হতে চলেছে। পাবনা সাঁথিয়া পৌরসভার বোয়ালমারি গোরস্থান থেকে চোমরপুর পর্যন্ত ৩ ফসলি জমির মাঝ দিয়ে প্রায় ২ কিলোমিটার পাকা রাস্তার কাজ শুরু করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডিসিএল এন্ড ওসি (জয়েন্টভেনচার)। সাঁথিয়া-বেড়া সড়কের প্রায় ৫০ গজের মধ্যে এই রাস্তা নির্মান করা হচ্ছে। মুল সড়কের পাশে নির্মানাধীন এই সড়কে একটি নির্মানাধীন কলেজ ও ২ কিলোমিটার দুরে মঞ্জুসহ কয়েকজন প্রভাবশালীর বাড়ি রয়েছে। তাদের স্বার্থ রক্ষার্থে আইইউজিআইপি প্রজেক্টের এলজিইডি ও সাঁথিয়া পৌরসভা তদারকিতে কাজটি শুরু করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ১১ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যায়ে প্রায় ২কিলোমিটার রাস্তা জমির মালিকদের ক্ষতিপুরন না দিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছেন। জমির মালিকদের দাবি তাদের জমিতে টমোটো, করলা, কাচা মরিচ, পেয়াজ, গমসহ বিভিন্ন শষ্য রয়েছে। কোন নোটিশ ছাড়াই হঠাত করে তাদের জমিতে মাটি ফেলে ভেকু মেশিন দিয়ে ফসল নষ্ট করা হচ্ছে। জমির মালিকগণ প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিবিঘেœ কাজ করতে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করেছে। পুলিশের উপস্থিতিতে ফসল নষ্ট করে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরবর্তিতে জমির মালিকগণ রাস্তা নির্মান বন্ধে সাঁথিয়া পৌর মেয়রসহ পাবনার বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ১নং আদালতে ৩জনের বিরুদ্ধে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন। যার নং ১৮৩/২০২৪। পরে ভুক্তভোগিরা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্টেটের কাছে ১৪৪ ধারা জারির আবেদন করেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ১৪৪ ধারা অনুমোদন করে আইনশৃংখলা রক্ষার স্বার্থে ওসি সাঁথিয়াকে নির্দেশ প্রদান করেন। এরপরেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রশাসনের সহযোগিতায় সড়ক নির্মান কাজ চালু রেখেছেন। এতে করে একদিকে রোপন করা ফসল নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে জমির মালিকেরা জমি হারিয়ে নি:স্ব হতে চলেছেন। জমির মালিকেরা জানান, তাদের প্রায় ২০ বিঘা ফসলি জমি রাস্তা নির্মান কাজে চলে যাচ্ছে। কয়েকজন কৃষকের এত বড় ক্ষতি তারা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। সাঁথিয়া পৌরমেয়র মাহবুব আলম বলেন, সাবেক মেয়র কাচা রাস্তা তৈরী করেছেন, আমি এটার পাকাকরন কাজ শুরু করেছি।
সাঁথিয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো: শাহিনুজ্জামান জানান, পৌরসভার ফান্ডের টাকা দিয়ে জমি কিনে রাস্তা করার কোন সুযোগ নেই। ব্যাক্তিমালিকাধীন জমিতে আমার রাস্তা তৈরী করে থাকি। রাস্তা নির্মানের ফলে ফসরের ক্ষতি হচ্ছে স্বীকার করেন নির্বাহী প্রকৌশলী ।
পুলিশ প্রহরায় কাজ করার কথা স্বীকার করেন ভেকুর মালিক ও ঠিকাদারের প্রতিনিধি।
অধিগ্রহন ছাড়া এতবড় প্রকল্প বাস্তবায়ন কিভাবে সম্ভব জানতে উপজেলা প্রকৌশলী এলজিডি সাঁথিয়ার কার্যালয়ে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
অধিগ্রহন ছাড়া ব্যাক্তি মালিকানাধীন ও ৩ ফসলি জমিতে রাস্তা তৈরী সম্ভব কিনা জানতে সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা: আলপনা ইয়াসমিনের কাছে গেলে তিনি ক্যামেরার সামনে কোন কথা বলতে রাজি হননি। আবেদনকারীরা প্রকৃত জমির মালিক কিনা তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে এসি ল্যান্ড সাঁথিয়াকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তদন্তকারী কর্মকর্তা উপজেলা সহকারী কর্মকর্তা (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো: রিফাতুল হক ক্যামেরার সামনে কোন কথা বলতে রাজি হয়নি।
যেখানে প্রধানমন্ত্রী বলছে ফসলি জমি নষ্ট করে কোন রাস্তা বা স্থাপনা তৈরী করা যাবে না, সেখানে ৩ ফসলি জমি অধিগ্রহন ছাড়াই কিভাবে সাঁথিয়া পৌরসভা রাস্তা তৈরী করছে তা খতিয়ে দেখতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজ।
ক্ষতিগ্রস্থদের দাবি, তাদের বৈধ সম্পত্তিতে কোনভাবেই বিনামুল্যে পৌরসভার রাস্তা হতে দেবেন না। প্রয়োজন হলে নিজেদের জীবন দিয়ে হলেও পৌরসভার অবৈধ কাজের প্রতিবাদ করবেন। তারা প্রধানমন্ত্রীসহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।